পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা খুবই সম্মান জনক ও চ্যালেঞ্জিং একটি পেশা। মানব সমাজে এ পেশার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই সমাজে সাংবাদিক দের রয়েছে দ্বায়বদ্ধতা। এ দ্বায়বদ্ধতা নিয়ে মহান পেশাতে নিয়োজিত থেকে সমাজের মানুষের জন্য ভালো কিছু করার জন্য সদা সচেষ্ট থাকাই হচ্ছে সাংবাদিকদের কাজ। নীতিবোধ ও নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে এ পেশাকে কলংকিত করা প্রকৃত সাংবাদিকের কর্তব্য নয়। নৈতিকতা ও নীতিবোধের মধ্যে থেকে সমাজের অনিয়ম ও দূর্নীতির চিত্র জন সমক্ষে প্রকাশ করাই সাংবাদিকের কাজ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যায় আমাদের দেশেও সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্মান জনক পেশা। আমাদের দেশে প্রথম দিকে সাংবাদিকতা শুরু হয়েছিল শিক্ষা বা প্রশিক্ষন ছাড়া। কালের বিবর্তনে আজ এ পেশাটির যথেষ্ট অগ্রগতি ও যুগপোযোগী হয়েছে। অনেক বাঁধা বিপত্তি ও বন্ধুর পথ অতিক্রম করে আজ এ পেশার যথেষ্ট মানোন্নয়ন হয়েছে। দেশের চলমান ঘটনা, সমাজের নানা সমস্যা ও অনিয়ম দূর্নীতির চিত্র তোলে ধরতে গিয়ে সংবাদ কর্মীদের অনেক বাঁধা আসলেও থেমে থাকেনা সাংবাদিকতা। এ যেন এক দুঃসাহসী অভিযান। সাংবাদিকদের এমন দুঃসাহসী অভিযানের কারণে দেশে স্থাপিত হয়েছে এ পেশার ভিত্তি। সাংবাদিকরা অনুসন্ধানী দৃষ্টি দিয়ে খবরের পেছনের খবর বের করে এনে দেশ ও জাতির সামনে তোলে ধরতে পিছপা হয়না। আর এ কারণে তাদের অনেক বাঁধা বিপত্তি ও বন্ধুর পথ অতিক্রম করতে হয়। অনেক সময় সত্য ঘটনা প্রকাশ করতে গিয়ে বিপদ ও জীবন নাশের হুমকির সন্মুখীন হতে হয়। এত ঝুঁকির পরও অবিরাম গতিতে চলে সাংবাদিকতা। নানা পিচ্ছিল পথ অতিক্রম করে চলতে থাকে সাংবাদিকদের কর্মকান্ড। এ যেন দিগন্ত জয়ের দুরন্ত নেশার স্পর্ধিত তারুণ্যের দুঃসাহসী উচ্চারণ। সাংবাদিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে পাঠকের সামনে ওঠে আসে দেশ বিদেশের নানা ধরনের বিচিত্র খবর। সংবাদ পিপাসু পাঠকের চাহিদা মেটাতে সদা সচেষ্ট সাংবাদিক সম্প্রদায়। সঠিক,নির্ভূল ও বস্তুনিষ্ট সংবাদ পাঠকের সামনে তোলে ধরা একজন সাংবাদিকের দায়ীত্ব ও কর্তব্য।
আর এ জন্যে পাঠকের কাছে সাংবাদিকদের রয়েছে দায়বদ্ধতা। আমাদের দেশে গণমাধ্যমের ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম। সাংবাদিকতা হচ্ছে একটি সেবা মূলক পেশা। এ পেশায় স্বাধীনতা থাকতে পারে কিন্তু স্বেচ্ছাচারিতার কোনো অবকাশ নাই। সুস্থ্য জাতি ও সমাজ বিনির্মানে সাংবাদিকদের হতে হবে সচেতন ও দ্বায়ীত্বশীল। আর সেই সাথে থাকতে হবে সততা, নিষ্ঠা ও সত্য বলার সৎ সাহস। সাংবাদিক হচ্ছে জাতির বিবেক, সমাজের দর্পন। তাই সাংবাদিকদের নৈতিকতা বিসর্জন দেওয়া যাবে না। ন্যায়নীতি ও নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে মহান এ পেশাকে কলুষিত করা কোনো সাংবাদিকের উচিত নয়। যারা নৈতিকতা ধরে রাখতে পারেনা তাদের এ পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় অনুপ্রবেশ করা উচিত। নৈতিকতা বিবর্জিত সাংবাদিকতা সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়।
পেশাগত দ্বায়ীত্ববোধ ব্যতিরেকে সাংবাদিকতা সমাজে মূল্যহীন। সত্যিকার অর্থে একজন সাংবাদিক যখন কোনো বিষয়ের উপর প্রতিবেদন তৈরী করবে তখন তাকে নিরপেক্ষ ভাবে বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রেখে ওই বিষয়টি জনসমেক্ষ প্রকাশ করবে। এতে করে সমাজে তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে গণমাধ্যমের অভুত পূর্ব উন্নতি সাধন হয়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন বেড়েছে সংবাদ মাধ্যমের প্রকাশনা অন্যদিকে বেড়েছে গণমাধ্যমকর্মী বা সংবাদকর্মী। এক সময় সংবাদকর্মীদের সংবাদ প্রেরণ করতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হত। কিন্তু বর্তমানে আর সংবাদ প্রেরণ করতে সে ঝামেলা করতে হয় না। এখন ঘরে বসেই কম্পিউটারের মাধ্যমে সংবাদ লিখে ইন্টারনেটের সাহায্যে সংবাদ ডেস্ক পাস করা খুবই সহজ হয়েছে।
প্রতিদিন পাঠক মহল নিত্য নতুন ও তরতাজা খবরের অপেক্ষায় অধির আগ্রহে বসে থাকে। পাঠক মহলের কাছে এ যেন প্রতিদিনের রুটিন। আমাদের দেশে এমন কিছু পাঠক আছেন এক দিন সকাল বেলা চায়ের টেবিলে সংবাদপত্র না পড়লে তাদের মনে কোথায় যেন অতৃপ্তি থেকে যায়। এমন পাঠকের সংখ্যাও দেশে কম নয়।
নিরপে ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের কোনো বিকল্প নেই। তথ্য জানা জন সাধারনের মৌলিক অধিকার। তাই ভূল তথ্য দিয়ে জন সাধারনদের বিভ্রান্ত করা কোনো সাংবাদিকের কাজ নয়। আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে সত্য অনুদ্ঘাটিত থাকলে সমাজে তিরসকর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। তাই এ বিষয়ের প্রতি সাংবাদিককে হতে হবে সচেতন ও দায়ীত্বশীল। সততা ও নিষ্ঠার সাথে তথ্য উদ্ঘাটন জনস্বার্থে অতি জরুরি। মনে রাখতে সংবাদপত্র হচ্ছে জনস্বার্থের অতন্ত্র প্রহরী। জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা করার সহায়ক শক্তি।
তাই ভূল তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন রচনা করে জনগণের এ মৌলিক অধিকারের উপর আঘাত করা সাংবাদিকের কাম্য নয়। দেশ ও জাতি গঠনে সাংবাদিকের ভূমিকা অপরিসীম। বিভ্রান্তি ও উস্কানিমূলক কোনো প্রতিবেদন তৈরি করে জনসমেক্ষ প্রকাশ করে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যেমন ঠিক নয় তেমনি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানাও কোনো সাংবাদিকের কাজ নয়। সমাজে সাংবাদিকদের যে দায়বদ্ধতা রয়েছে তা বিসর্জন দিলে আর কোনো মূল্য থাবেনা।
সমাজে দায়বদ্ধতা নিয়ে একজন সাংবাদিক সততা ও নিষ্ঠার সাথে দিনের পর দিন কঠোর পরিশ্রম করে সঠিক তথ্য উদ্ঘাটন করে জনগনের সামনে তুলে ধরে ন্যায়,অন্যায়,দূর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র। সাংবাদিকদের এরকম তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন তৈরি করে জনসমে প্রকাশ করলে সহজেই যে কেউ অনিয়ম, দূর্নীতি করার সাহস হারিয়ে ফেলবে। আর এর মধ্য দিয়ে প্রকাশ পাবে একজন সাংবাদিকের সৎ গুণাবলী।নৈতিকতা ঠিক রেখে সামাজিক মূল্যবোধের মধ্য দিয়ে এ পেশা চালিয়ে যাওয়াই হচ্ছে প্রকৃত সাংবাদিকতা। কারণ জাতি একজন সাংবাদিকের উপর অনেক কিছু আশা করে। জনগণের আশা প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটার জন্য সাংবাদিকদের হতে হবে সৎ ও নির্ভিক কলম সৈনিক। সাংবাদিকরা হচ্ছে দেশ প্রেমের দীক্ষায় দীক্ষিত দেশ প্রেমিক, কলম সৈনিক।
শানিত তলোয়ার ও অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রের চেয়েও ভয়ঙ্কর সাংবাদিকের কলম। একলমের মাধ্যমে সমাজ থেকে উৎপাটন করা সম্ভব সকল জঞ্জাল। তাই সমাজের চোখে যারা অপরাধী তারা কিছুটা হলেও ভয় পায় সাংবাদিকদের। শুধু তাই নয় মাফিয়া ডন থেকে শুরু করে মতার উঁচু শিখরে যারা অবস্থান করছেন তারাও সাংবাদিকদের ভয়ে তাদের কর্মকান্ড চালায় কৌশলে ও অতি গোপনে। এমন মতা সম্পন্ন কলম সৈনিকেরা যদি ন্যায়,নীতি, নিষ্ঠা ও নৈতিকতা বজায় রেখে তাদের মহান এ পেশায় নিয়োজিত থাকে তাহলে সমাজে অন্যায়, অনিয়ম ও দূর্নীতি অনেকটা কমে যাবে। দেশের সাধারণ মানুষের মনে বর্ষিত হবে শান্তির বাণী। জাতি দেখবে আশার আলো। সাংবাদিকতার জগতে সৎ পেশাদারি সাংবাদিকতার বিপরীতে হলুদ সাংবাদিকতা বলে একটা কথার প্রচলন আছে।
এ হলুদ সাংবাদিকতা আজ সমাজে কালো ছায়া ফেলেছে। হলুদ সাংবাদিকদের এমন কিছু কার্যকলাপের জন্য গোটা সাংবাদিক সমাজের কাছে আতঙ্ক হিসাবে চিহ্নিত। পেশাদ্বারিত্বের দিক থেকে নীতিবোধে অন্য পেশার লোকদের চেয়ে সাংবাদিকরা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। একটি ভূল তথ্যের সংবাদের কারণে অনেক তিক্ষè হতে পারে। তাই এদিকে যথেষ্ট দ্বায়ীত্বশীল হবে সাংবাদিকের। সমাজে সাংবাদিকদের রয়েছে দায়বদ্ধতা। এ দায়বদ্ধতা হচ্ছে অনিয়ম ও দূর্নীতির সঠিক চিত্র উদ্ঘাটন করে জনসমে তুলে ধরা। আর এ জন্য নানা বাঁধার সন্মুখিন হতে হয় সাংবাদিক দের। এটাই হল সমাজের কাছে সাংবাদিক দের দায়বদ্ধতা। এ দ্বায়বদ্ধতার কারণে এ পেশা আজ সমাজের চোখে মহান পেশা। এ মহান পেশা কলুষিত হয় ইয়েলো জার্নালিজম বা হলুদ সাংবাদিকতার কারণে।
সামাজিক দৃষ্টিতে মহান ও সম্মানজনক এ পেশাকে সমাজের কাছে চির উন্নত রাখাই সাংবাদিকদের কর্তব্য। নৈতিকতা ও নীতি বোধের মধ্যে থেকে সমাজ সেবা করা সাংবাদিকদের ব্রত হওয়া চাই। সমাজে মানুষ যখন এক শ্রেণীর লোকেদের দ্বারা অত্যাচারিত ও নিষ্পেষিত হয়ে কোথাও কোনো বিচার না পায় তখন বাধ্য হয় সাংবাদিকদের নিকট স্বরনাপন্ন হতে। তখন নিষ্পেষিত ঐ লোকটির সাংবাদিকই একমাত্র ভরসা। সমাজের নিরীহ মানুষের এমন দূর্দিনে যদি সাংবাদিকরা নৈতিকতা ও নীতিবোধ বিসর্জন দেয় তাহলে সমাজে সাংবাদিকদের গ্রহণ যোগ্যতা থাকবেনা। আর এ কারণেই সমস্ত সাংবাদিক সমাজ হবে ঘৃনা ও উপহাসের পাত্র।
তাই নৈতিকতা ও আদর্শ্যরে মধ্যে থেকে সমাজের জন্য নিরলস ভাবে কাজ করলে সর্ব মহলে সাংবাদিকদের মান মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। সাংবাদিকতাই হোক আর অন্য যে কোনো পেশাই হোক নীতিবোধে অটল থাকাই বাঞ্চনীয়। একজন পেশাজীবির নৈতিকতা বিসর্জন দিলে তার আর কিছুই থাকেনা। সংবাদ পরিবেশনায় বিভ্রান্তি বা উস্কানির কোনো গ্রহণ যোগ্যতা নাই। এজন্য একজন সাংবাদিককে হতে হবে দ্বায়ীত্বশীল সমাজ সচেতন ব্যক্তিত্ব। আর থাকতে হবে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন নৈতিকতা।
সুুুমন চক্রবর্তী                          আহবায়ক,আরজেএফ যশোর জেলা কমিটি  প্রকাশক ও সম্পাদক- দৈনিক কলম কথা